বৃষ্টির দিনে খিচুড়ি বিলাস!! ৩ প্রকার খিচুড়ি রেসিপি! Hotchpotch Recipes.
বর্ষার দিনে খিচুড়ি বিলাস
তিন স্বাদে উপভোগ করুন বাঙালির সেরা আরামদায়ক খাবার
 
            আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা, ঝমঝমিয়ে নামছে বৃষ্টি আর নাকে ভেসে আসছে ভেজা মাটির সোঁদা গন্ধ – এমন দিনে প্লেটে ধোঁয়া ওঠা গরম খিচুড়ি ছাড়া আর কী-ই বা চাইতে পারে এক বাঙালি মন? খিচুড়ি শুধু একটি খাবার নয়, এটি বাঙালির আবেগ, ঐতিহ্য আর আরামের প্রতিশব্দ।
আজ Shohoz Recipe আপনাদের জন্য নিয়ে এলো বাংলাদেশে প্রচলিত এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় তিন ধরনের খিচুড়ির সহজ রেসিপি। আপনার পছন্দ অনুযায়ী যেকোনো একটি বানিয়ে ফেলুন আর জমিয়ে তুলুন এই বর্ষার দিনগুলো।
১. নরম খিচুড়ি (পাতলা খিচুড়ি)
অসুস্থতার পথ্য থেকে শুরু করে বৃষ্টির দিনের আলসে দুপুর—এই নরম খিচুড়ির আবেদন চিরন্তন। এটি বানানো খুব সহজ আর খেতেও অসাধারণ আরামদায়ক।
 
                উপকরণ
- পোলাওয়ের চাল/ভাতের চাল - ১ কাপ
- মসুর ডাল - ১/২ কাপ
- মুগ ডাল - ১/২ কাপ
- পেঁয়াজ কুচি, আদা বাটা, রসুন বাটা
- হলুদ গুঁড়া - ১.৫ চা চামচ
- কাঁচা মরিচ, তেজপাতা, লবণ
- সরিষার তেল/সয়াবিন তেল - ৩ টেবিল চামচ
- গরম পানি - ৭-৮ কাপ (ঘনত্ব অনুযায়ী)
- বিশেষ আকর্ষণ: ঘি - ১ টেবিল চামচ (ইচ্ছা)
প্রস্তুত প্রণালী
- চাল এবং দুই রকম ডাল একসাথে ভালো করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন।
- একটি বড় হাঁড়িতে তেল গরম করে তেজপাতা ও পেঁয়াজ কুচি দিয়ে হালকা সোনালী করে ভাজুন।
- এবার আদা, রসুন ও হলুদ দিয়ে মশলাটা সামান্য পানি দিয়ে কষিয়ে নিন।
- মশলা কষানো হলে তাতে ধুয়ে রাখা চাল-ডালের মিশ্রণটি দিয়ে ২-৩ মিনিট ভালোভাবে নাড়ুন।
- এবার ৭-৮ কাপ গরম পানি ও স্বাদমতো লবণ দিয়ে নেড়ে ঢাকনা দিয়ে দিন।
- চাল-ডাল সেদ্ধ হয়ে ঘন হয়ে আসা পর্যন্ত রান্না করুন। মাঝে মাঝে নেড়ে দিতে হবে যেন নিচে লেগে না যায়।
- নামানোর ঠিক আগে চেরা কাঁচা মরিচ ও ঘি ছড়িয়ে দিয়ে নেড়েচেড়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।
২. ভুনা খিচুড়ি (ঝরঝরে খিচুড়ি)
কোনো বিশেষ উপলক্ষ বা অতিথি আপ্যায়নে ঝরঝরে ভুনা খিচুড়ির জুড়ি নেই। এর সুগন্ধ আর স্বাদ সবার মন জয় করে নেয়।
 
                উপকরণ
- পোলাওয়ের চাল (কালোজিরা/চিনিগুঁড়া) - ২ কাপ
- মুগ ডাল - ১ কাপ (টেলে নেওয়া)
- পেঁয়াজ কুচি, আদা বাটা, রসুন বাটা
- হলুদ, মরিচ, জিরা, গরম মশলা গুঁড়া
- এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, তেজপাতা
- ফুটন্ত গরম পানি - ৪ কাপ
- বিশেষ আকর্ষণ: তেল/ঘি - ১/২ কাপ
প্রস্তুত প্রণালী
- মুগ ডাল একটি শুকনো কড়াইতে হালকা আঁচে ভেজে (টেলে) নিন। এরপর চালের সাথে মিশিয়ে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে রাখুন।
- হাঁড়িতে তেল/ঘি গরম করে গোটা গরম মশলা ও তেজপাতা ফোঁড়ন দিন। পেঁয়াজ কুচি সোনালী করে ভাজুন।
- সব বাটা ও গুঁড়া মশলা দিয়ে কষিয়ে চাল-ডালের মিশ্রণ দিয়ে ৪-৫ মিনিট মাঝারি আঁচে ভাজুন।
- এবার ফুটন্ত গরম পানি ও লবণ দিয়ে ভালোভাবে নেড়ে দিন।
- পানি ফুটে উঠলে ঢাকনা দিয়ে আঁচ কমিয়ে ১৫-২০ মিনিট দমে রাখুন।
- নামানোর ৫ মিনিট আগে কাঁচা মরিচ ও গরম মশলা গুঁড়া ছড়িয়ে আলতো করে নেড়ে আবার ঢেকে দিন।
৩. মাংসের খিচুড়ি (এক হাঁড়ির বিরিয়ানি)
যখন আরাম আর রাজকীয়তা একসাথে চাই, তখন মাংসের খিচুড়ির কোনো বিকল্প হয় না। এটি একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ খাবার।
 
                 উপকরণ
- গরু/খাসির মাংস - ৫০০ গ্রাম
- পোলাওয়ের চাল - ২ কাপ, ডাল - ১ কাপ
- পেঁয়াজ কুচি, আদা-রসুন বাটা
- টক দই - ৩ টেবিল চামচ
- হলুদ, মরিচ, ধনিয়া, জিরা গুঁড়া
- বিশেষ আকর্ষণ: জয়ফল-জয়ত্রী বাটা (সামান্য)
প্রস্তুত প্রণালী
- প্রথমে মাংসের সব মশলা দিয়ে কষিয়ে নরম করে রান্না করে নিন। মাংসে হালকা ঝোল থাকবে।
- অন্য একটি হাঁড়িতে ঘি গরম করে পেঁয়াজ ভেজে তাতে ধুয়ে রাখা চাল-ডাল দিয়ে কিছুক্ষণ ভাজুন।
- ভাজা চাল-ডালের মধ্যে রান্না করা মাংস ঝোলসহ ঢেলে দিন এবং সবকিছু একসাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
- পরিমাণমতো গরম পানি (মাংসের ঝোল মেপে) ও লবণ দিয়ে নেড়ে দিন।
- পানি ফুটে উঠলে আঁচ কমিয়ে ২০-২৫ মিনিট দমে রাখুন।
FAQ - সাধারণ জিজ্ঞাসাসমূহ
ভুনা খিচুড়ি ঝরঝরে করার প্রধান কৌশল হলো চাল ও ডাল মশলার সাথে ভালোভাবে ভাজা এবং সঠিক পরিমাণে গরম পানি ব্যবহার করা। চাল-ডালের মিশ্রণের ঠিক দ্বিগুণ পরিমাণ ফুটন্ত গরম পানি ব্যবহার করলে খিচুড়ি সবচেয়ে ঝরঝরে হয়। রান্নার শেষে ভালোভাবে দমে রাখাও জরুরি।
স্বাদ ও সুগন্ধের জন্য পোলাওয়ের চাল (যেমন: কালোজিরা বা চিনিগুঁড়া) সবচেয়ে ভালো। তবে সাধারণ ভাতের চাল দিয়েও খিচুড়ি রান্না করা যায়। ডালের ক্ষেত্রে, নরম খিচুড়ির জন্য মসুর ডাল আর ভুনা খিচুড়ির জন্য হালকা ভেজে নেওয়া মুগ ডাল সেরা।
খিচুড়ি রান্নার সময় ভারী তলার হাঁড়ি ব্যবহার করুন। পানি দেওয়ার পর যখন ফুটে উঠবে, তখন চুলার আঁচ কমিয়ে দিন। মাঝে মাঝে আলতো করে নেড়ে দিন এবং শেষ ১০-১৫ মিনিট ঢাকনা দিয়ে দমে রান্না করুন। এতে লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
খিচুড়ির স্বাদ বহুগুণে বাড়াতে নামানোর আগে ১-২ চামচ খাঁটি ঘি যোগ করতে পারেন। এছাড়া, ভাজা পেঁয়াজ (বেরেস্তা), ধনে পাতা কুচি, বা আস্ত কাঁচা মরিচ দমে দেওয়ার সময় যোগ করলে খুব সুন্দর সুগন্ধ আসে। মাংসের খিচুড়িতে সামান্য জয়ফল-জয়ত্রী বাটা রাজকীয় স্বাদ এনে দেয়।
মূল পার্থক্য হলো পেঁয়াজ-রসুনের ব্যবহার এবং অন্যান্য উপকরণে। নিরামিষ খিচুড়িতে সাধারণত পেঁয়াজ-রসুন ব্যবহার করা হয় না, তার বদলে আদা ও বিভিন্ন সবজি (আলু, ফুলকপি, মটরশুঁটি) যোগ করা হয়। অন্যদিকে আমিষ খিচুড়িতে পেঁয়াজ-রসুন থাকে এবং প্রায়শই মাংস বা ডিম দিয়ে রান্না করা হয়।
 
